কৃষ্ণকলি

 কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, 

 কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।

মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে 

 কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।

ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, 

মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে।

 কালো? তা সে যতই কালো হোক, 

 দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।



ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে 

 ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,

শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে 

 কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।

আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু 

শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।

 কালো? তা সে যতই কালো হোক, 

 দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।



পূবে বাতাস এল হঠাত্‍‌ ধেয়ে,

 ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।

আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,

 মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।

আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে,

আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।

 কালো? তা সে যতই কালো হোক,

 দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।



এমনি করে কাজল কালো মেঘ 

 জ্যৈষ্ঠমাসে আসে ঈশান কোণে।

এমনি করে কালো কোমল ছায়া

 আষাঢ়মাসে নামে তমাল-বনে।

এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে

হঠাত্‍‌ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।

 কালো? তা সে যতই কালো হোক,

 দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।



কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, 

 আর যা বলে বলুক অন্য লোক।

দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে

 কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।

মাথার পরে দেয়নি তুলে বাস,

লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ।

 কালো? তা সে যতই কালো হোক,

 দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।


✍️ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post